শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫, ০১:৩৬ অপরাহ্ন

আম নিয়ে আতংকিত চাষিরা

স্টাফ রিপোর্টার:: বাদুর এবং ফল খেকো পাখির সামান্য টোকায় ঝরে পড়ছে ও নষ্ট হচ্ছে, আম নিয়ে আতংকে রয়েছে চাষিরা। চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুরে এ মৌসুমে ১৩০০ টাকা মনের মোম্বাই আম বিক্রি হয়েছে ৭০০ টাকা এবং ১৪০০ থেকে ১৮০০ টাকার মনের হিমসাগর বিক্রি হয়েছে ১০০০ থেকে ১১০০ টাকায়। ল্যাংড়া ১০০০ টাকার বেশি বিক্রি হবে কিনা বলা যাচ্ছে না। আম্্রপালি নিয়ে কি হয় কে জানে?

জাতভিত্তিক আম পরিপক্কতার সময়কাল বাস্তবায়ন মনিটরিং হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে। এতে যে যার মতো করে গাছ থেকে আম পেড়ে বাজারজাত করার সুযোগ পাচ্ছে। আম চাষিরা ওই সময়কালের তালিকা আমলেও নেয়নি। তাদের মতে ওসব দিন তারিখ মেনে গাছ থেকে আম পাড়া যায় না।

ওই তালিকা এবং আমের পরিস্থিতি সম্পর্কে দেশের স্বীকৃত ও অভিজ্ঞ আম চাষি মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, চাষিদের ওই তালিকা দেখার সুযোগ নেই। তালিকা যারা তৈরী করেছে তারাই দেখুক। চাষিরা ওই তালিকা মানতে পারছে না। তালিকা বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা কেউ দেখতেও আসছে না। বাদুর ও আম খেকো পাখিরা খেয়ে ফেলছে, সামান্য টোকায় গাছে থেকে ঝরে পড়ছে আম। আম চাষিদের মাথা খারাপ। তাদের কষ্টের শেষ নেই। অযাচিত হস্তক্ষেপের প্রতিবন্ধকতায় চাষিরা এখন আম নিয়ে আতংকিত। এতে আমের উৎপাদন কমার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

বিপনননের অসুস্থতা কাটাতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউটের টাক্স ফোর্সের সিদ্ধান্তের আলোকে ডিএই ও এআইএস গত ২৪ মে সংবাদ মাধ্যমে ওই জাতভিত্তিক আম পরিপক্কতার সম্ভাব্য সময়কালের তালিকা প্রচার করে। কিন্তু ওই সময়কালের তালিকা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা দেখার কেউ নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট উইং-এর একাধিক কর্মকর্তা একথার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, গাছ থেকে আম পাড়ার তালিকা গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। তবে তা কেউ মানছে কিনা তা দেখা হচ্ছেনা। এ বিষয়ে মনিটরিং ব্যবস্থাও নেই। সরকার ২০১৫ সালে আম পাকানোর ক্ষেত্রে সব ধরনের কেমিকেলের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। এদিকে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ অনেকে আম পাকাতে অনুমোদিত মাত্রায় রাসায়নিক ব্যবহার করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছে। তবে ওই অনুমোদিত বা সহনশীল মাত্রাটা কি তা ঠিক করা হয়নি। এটি ঠিক করবে কে তাও জানা যায়নি।

এদিকে আইন প্রয়োগকারি সংস্থা তাদের মতো করে বিভিন্ন বাজারে বিষ মুক্ত নিরাপদ আমের নিশ্চয়তার জন্য অভিযান চালায়। এক্ষেত্রে যে যার অবস্থানে থেকে আম উৎপাদন ও বিপননের বিষয়ে নানা কথা বলছে ও ব্যবস্থা নিচ্ছে। এ বিষয়ে নেই কোনো সমন্বিত উদ্যোগ ও পরিচ্ছন্ন ধারণা। এ বিষয়ে ডিএই’র হর্টিকালচার উইং-এর পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, কোন সময়ে গাছ থেকে আম পাড়তে হবে, কিভাবে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে হবে- এসংক্রান্ত সব বিষয়েই আম চাষি ও সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সচেতনামূলক সভা করা হচ্ছে। এ বিষয়ের সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনদের নিয়ে একটি সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে সচ্ছ, সহজ ও পরিচ্ছন্ন ধারণা গড়ে তোলা দরকার।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের(বারি) চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শরফ উদ্দিন জানান, আমের গুণগতমান নিশ্চিত করতে এবং ভোক্তাদের চাহিদানুযায়ি নিরাপদ, বিষমুক্ত ও স্বাস্থ্য সম্মত আম বাজারজাত করার এ বিষয়ে একটি সমন্বিত আম সংগ্রহের সময় নির্ধারণের তাগিদ থেকে কৃষি মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট(বারি)কে নির্দেশনা দেয়। এই আলোকে বারি টাক্স ফোর্সের মাধ্যমে ওই জাতভিত্তিক আম পরিপক্কতার সম্ভাব্য সময়কালের তালিকা তৈরি করে। আমের সামগ্রিক পরিস্থিতির মনিটরিং করা দরকার।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com